• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ২ জৈষ্ঠ ১৪২৯

জাতীয়

গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং

  • প্রকাশিত ০৬ এপ্রিল ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশজুড়ে এখন মৃদু তাপপ্রবাহ চলছে। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে। গরম বাড়তেই শুরু হয়েছে লোডশেডিং। রাজধানীতে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কম হলেও ঢাকার বাইরে পরিমাণ ব্যাপক। উপজেলা পর্যায়ে কোথাও কোথাও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

গ্রামাঞ্চলে ইফতার ও সেহরির সময়ও বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার গেলে টানা দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ আসছে না। প্রচণ্ড গরমে বারবার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে জনজীবন জেরবার। বিঘ্নিত হচ্ছে সেচসহ স্বাভাবিক কার্যক্রম।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, আগামী কয়েক দিন তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো। তাদের ভাষ্য, এলাকাভেদে চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ ভাগ বিদ্যুৎ কম মিলছে। বাধ্য হয়ে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। সরবরাহ না বাড়লে সামনে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র বলছে, দেশে ও দেশের বাইরে দেড় শতাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। তবে সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে সর্বোচ্চ সাড়ে ১৬ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার বিপরীতে পাওয়া যাচ্ছে ১৩ হাজার থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। ঘাটতি থাকছে তিন-সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াট। জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন করতে না পারায় জেলা-উপজেলা পর্যায়ে লোডশেডিং করে ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। গ্যাস সরবরাহ না বাড়লে সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

পিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, চাহিদামতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। কয়লা থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন করা হচ্ছে। এলএনজি টার্মিনাল চালু হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়বে বিদ্যুৎ খাতে। তেলচালিত কেন্দ্রগুলোকে উৎপাদন বাড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলোর সূত্র জানায়, পিক সময়ে (সর্বোচ্চ চাহিদা) দেশে প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। এ জন্য গ্রামগঞ্জে লোডশেডিংও বেশি। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চট্টগ্রাম ও রংপুরে বেশি লোডশেডিং। কিছুটা স্বস্তি বরিশাল বিভাগে।

এ ব্যাপারে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গ্যাস সংকটে ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট উৎপাদন কম হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে বলে জানান তিনি।

বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে দিনে অন্তত ২৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ হচ্ছে ১০০। পেট্রোবাংলার কাছে গ্রীষ্মের জন্য অন্তত ১৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চেয়েছে পিডিবি। দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন সক্ষমতা ১২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট। সরবরাহ কম থাকায় গড়ে সাড়ে ৫ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে।

তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ৬ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট। খরচ বেশি বলে এগুলো কম চালানো হয়। তবে গরমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চালানো হচ্ছে এসব কেন্দ্রও। এতে পিডিবির খরচ বেড়ে গেছে। তবে এখানেও রয়েছে জ্বালানি সংকট। বেসরকারি খাতের তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তেল আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছে না। পিডিবির কাছে বড় অঙ্কের বকেয়া পড়েছে তাদের।

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, এখন দিনে ২৬৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে এলএনজি থেকে ৬০ কোটি ঘনফুট মিলছে। একটি এলএনজি টার্মিনাল বন্ধ থাকায় কমপক্ষে ২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস কম পাচ্ছে। এ টার্মিনাল চালু হলে গ্যাস সরবরাহ বাড়তে পারে। গত মাসে সামিটের টার্মিনালটি চালুর কথা থাকলেও গ্যাস সরবরাহ এখনও শুরু করেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় লোডশেডিং বেড়েছে। রমজানে মানুষ অতিষ্ঠ এবং ঈদ ঘিরে স্বাভাবিক কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টায় পাঁচ থেকে ছয়বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একবার বিদ্যুৎ গেলে ঘণ্টারও বেশি থাকছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads